ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ঈদুল আজহার আনন্দে যখন ডুবে থাকার কথা ছিল, তখনও নেমে এলো মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের ছায়া। ঈদের দ্বিতীয় দিনেও ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৫৬ ফিলিস্তিনি। গাজার সিভিল ডিফেন্স ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, এই দুঃসংবাদ আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—গাজায় শান্তির পরিবর্তে কী ভয়াবহতা নেমে এসেছে।
ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনে, গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে চালানো ইসরাইলি হামলায় প্রাণহানির এই ঘটনাগুলো ঘটে। গাজা সিটির সাবরা এলাকায় একক হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৬ জন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৫০ জন। গাজার সিভিল ডিফেন্স বিভাগের ভাষ্যমতে, এটি ছিল “একটি সম্পূর্ণ গণহত্যা”। এছাড়া দক্ষিণ গাজার রাফাহর নিকটবর্তী আল-আখাওয়া এলাকায় মানবিক সহায়তা নিতে অপেক্ষারত অবস্থায় ইসরাইলি গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৮ জন ফিলিস্তিনি। হামলার কারণ হিসেবে ইসরাইল বরাবরের মতোই ‘সন্ত্রাসবাদ দমন’ বলছে, তবে বাস্তবে এর চিত্র দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
সকাল থেকে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় ইসরাইলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। গাজা সিটি, রাফাহ ও দেইর আল-বালাহ—এই তিনটি এলাকায় ছিল প্রধান হামলার লক্ষ্যবস্তু। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাটি হয়েছে গাজা সিটির সাবরা এলাকায়, যেখানে একসঙ্গে ১৬ জন নিহত হন। গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, বোমাবর্ষণের পর ঘটনাস্থল থেকে পাথরের নিচে চাপা পড়া বহু লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। অনেক শিশু ও নারীও আছেন হতাহতদের মধ্যে।
মানবিক সহায়তার জন্য অপেক্ষমাণ ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনাও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। আল-আখাওয়া এলাকায় ইসরাইলি সেনারা যেভাবে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে, তাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিহিত করছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো। গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত শুধু মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরাইলি গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ১১৮ জন ফিলিস্তিনি।
গতকাল ঈদের প্রথম দিনেও থেমে থাকেনি হামলা। ইসরাইলি বাহিনী সেদিনও ৪২ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। ফলে ঈদের দুই দিনেই মোট ৯৮ জন নিহত হলেন ইসরাইলি হামলায়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫৪,৭৭২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১,২৫,৮৩৪ জন। শুধু গত ৪৮ ঘণ্টায়ই প্রাণ হারিয়েছেন ৯৫ জন, আহত হয়েছেন আরও ৩০৪ জন। এই তথ্যগুলো গাজার বর্তমান পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে।
এদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা গাজা থেকে উদ্ধার করেছে থাইল্যান্ডের এক নাগরিকের লাশ। তাকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার সময় অপহরণ করা হয়েছিল। যদিও এই ঘটনাকে ঘিরে ইসরাইল কোনো শান্তির ইঙ্গিত না দিয়ে আরও আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা।
Leave a Reply