1. newsbhorerdhani@gmail.com : admi2017 :
মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:০৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
উত্তরায় সাংবাদিক আবু হাসান অপহরণ। অদৃশ্য ইশারায় মূল আসামীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে, প্রশাসনের নীরব ভূমিকা আতঙ্কে পরিবার উত্তরায় প্রকাশ্যে নারীকে মারধরের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালের অভিযোগ উঠেছে মহাসিনের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রধান উপদেষ্টার ৭ প্রস্তাব লুটের অস্ত্রের তথ্য দিলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার, গোপন থাকবে তথ্যদাতার পরিচয় ফিচার রিপোর্ট আড়ং-এর জামানত বানিজ্য, টাকা দিলেও সিলিংয়ে ঝুলছে শাকিলের লাশ অস্তিত্ব সংকটে যুক্তরাষ্ট্র’ আ.লীগ অপকর্ম করলে ছাড় পাবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসর পারভেজ গনহত্যার মাস্টারমাইন্ড! হবিগঞ্জের বাহুবলে দোকান ও জমি জবর দখলের থানায় জিডি প্রবাসীর কাজী খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে

চট্টগ্রামে অবৈধ ৪০ লাখ টাকার কাঠ চালানের রফাদফা ৫ লাখে ওসি ও বক্সের এসআই

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫
  • ১২৯ ৮০.০০০বার

চট্টগ্রাম নগরের বহুল আলোচিত চান্দগাঁও থানা যেন এখন দুর্নীতি, চাঁদাবাজি আর বেআইনি লেনদেনের আঁতুড়ঘর। সম্প্রতি একটি অবৈধ কাঠবোঝাই ট্রাক আটককে কেন্দ্র করে থানার অভ্যন্তরে সংঘটিত ঘটনাগুলো পুলিশের সুনামকে নতুন করে কলঙ্কিত করেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওসি মো. আফতাব উদ্দিনের অধীনে থানাটি পরিণত হয়েছে এক ‘টাকার মেশিনে’, যেখানে ন্যায়বিচার নয়, বরং টাকার অঙ্কই হয়ে দাঁড়িয়েছে সমস্ত সিদ্ধান্তের নিয়ামক।

জানা যায়, ২১ জুলাই দিবাগত রাত ২টা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাট মোড়ে কাঠবোঝাই একটি ট্রাককে থামার সিগন্যাল দেন থানার ডিউটিরত এএসআই আবু জাফর ও তার সঙ্গী ফোর্স। কিন্তু ট্রাকটি নির্দেশ অমান্য করে দ্রুত পালিয়ে যায়। ফোর্স সঙ্গে সঙ্গে ধাওয়া দিলে শেষমেশ বলিরহাট এলাকা থেকে সেটি আটক করা হয়। আটক করার পর জানা যায়, আনুমানিক ৪০ লাখ টাকার কাঠের পুরো চালানটি অবৈধ। এরপর গোপনে শুরু হয় কাঠ মালিকপক্ষের দেনদরবার। তবে এএসআই আবু জাফর অনড় থাকেন। তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘সব কিছু ওসি স্যারের সামনেই হবে, এখানে কোনো রফাদফা হবে না।’ পরে কাঠ ব্যবসায়ীরা থানার ক্যাশিয়ার এস্কান্দরকে ফোনে কথা বলিয়ে চেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হন।

কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই চিত্র পাল্টে যায়। এএসআই আবু জাফর নিজেই ড্রাইভ করে ভোর ৫টায় কাঠবোঝাই ট্রাকটি থানায় নিয়ে আসেন। অথচ পরদিন রাতে দেখা যায়, কাঠের বৈধ কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ছাড়া এবং কোনো মামলা না করেই সেই ট্রাকটি ২২ জুলাই রাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে। এই ‘ডিল’ সম্পন্ন হয় ওসি আফতাব উদ্দিন, এএসআই আবু জাফর ও সেকেন্ড অফিসার আব্দুল কুদ্দুসের হাত ধরে। পুরো লেনদেনটি হয় সেকেন্ড অফিসারের রুমে।

স্থানীয় সূত্রের দাবি, ওসি আফতাব উদ্দিন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে চান্দগাঁও থানায় ‘অর্থের বিনিময়ে ছাড়পত্র’ যেন ওপেন সিক্রেট হয়ে গেছে। আটক আসামিদের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হয়। অন্যদিকে ভুক্তভোগীদের উল্টো মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে চাপে রাখা হয়।

এছাড়াও ওসি আফতাব থানাধীন এলাকার সমস্ত অবৈধ স্পট থেকে টাকা সংগ্রহ করেন ক্যাশিয়ার এস্কান্দর ও দিদারের মাধ্যমে। বলিরহাট এলাকা ফার্নিচার জগতের জন্য পরিচিত। বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা ও থানা পুলিশের ম্যানেজে প্রতিদিন অবৈধভাবে পাচার হয় সেগুন, মেহগনি, গর্জন, জারুল, চাপালিশ, গামারি, কড়ই ও আকাশমনি কাঠ।

আরও অভিযোগ রয়েছে, বহদ্দারহাট এলাকার ১৩টি আবাসিক হোটেল থেকে মাসে ২০ হাজার টাকা করে ‘চাঁদা’ নেওয়া হয়। টাকা দিতে দেরি হলে হোটেলগুলোর বিরুদ্ধে ‘অভিযান’ চালিয়ে হয়রানি করা হয়। এসব হোটেলে প্রকাশ্যে চলছে দেহব্যবসা, আর পুলিশ রয়েছে নীরব দর্শক।

অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও প্রতি মাসে আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। চান্দগাঁও থানার একাধিক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক ‘সময়ের কণ্ঠ-কে জানিয়েছেন, ‘আমাদের ওসি স্যার টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না। তার চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে হয়রানি নিশ্চিত। বহদ্দারহাট ফুটপাত থেকেও প্রতি মাসে প্রায় ২ লাখ টাকা চাঁদা ওঠে, যা ওঠে বহদ্দারহাট পুলিশ বক্স ইনচার্জের মাধ্যমে। তাছাড়া প্রতি সপ্তাহে ফল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ওসি সাহেবের বাসার জন্য ফল ফ্রুট নিয়ে যাওয়া হয়। এজন্য সিটি করপোরেশনের অভিযানের পরেও ফুটপাতে হকারদের অবাধ দখলদারি চলছে। কিছু রাজনৈতিক ছত্রছায়াধারী চাঁদাবাজের সঙ্গেও তার গভীর সখ্য রয়েছে।’

ওসি আফতাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন নয়। স্থানীয়দের মতে, প্রতিদিন থানার অভ্যন্তরে ঘটে গোপন ‘লেনদেন’, যা পুলিশের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

একজন হোটেল মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রতি মাসেই আমাদের ‘মাসোহারা’ দিতে হয়। একদিন দেরি হলেই পুলিশ অভিযান চালায়। অতিথিদের ধরে নিয়ে গিয়ে মামলা দেয়। অনেক সময় থানায় নিয়ে গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার চান্দগাঁও থানার ওসি মো. আফতাব উদ্দিনকে ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

এএসআই আবু জাফর বলেন, ‘ভাই, আপনি কোথায় আছেন বলে, আমি আপনার সাথে সাক্ষাতে কথা বলবো। মোবাইল ফোনে এভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জজকোর্টের অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ হোসাইনী দৈনিক‘সময়ের কণ্ঠ-কে বলেন, ‘বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪০৮ ধারায় কোনো কর্মচারী দায়িত্বের অপব্যবহার করে আত্মসাৎ করলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের জেল ও অর্থদণ্ড হতে পারে। আর কোনো ঘটনা তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় হাতেনাতে ধরা কোনো অবৈধ মালামাল কিংবা কোনো অপরাধীকে অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া— এটি ২১৭ ধারায় সরকারি কর্মচারীর দায়িত্বে গাফিলতি ও দুর্নীতির শামিল।’

এস আই মোঃ ফয়সাল ছবি।

তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় চান্দগাঁও থানার ওসি, এসআই

মো ফয়সাল ও সংশ্লিষ্ট এএসআইদের ভূমিকা তদন্তের আওতায় আনা জরুরি। পুলিশের কাজ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা, ‘দামি বন্দোবস্ত’ নয়। এভাবে অবৈধ মালামাল ধরে আবার অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া শুধু নৈতিক বিচ্যুতিই নয়, বরং প্রশাসনিক দুর্নীতির জলজ্যান্ত প্রমাণ।’

অবশেষে পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না, ওসি থেকে জেনে তারপর জানাতে পারবো।সময়ের অনুসন্ধানে চোখ রাখুন

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2015 দৈনিক ভোরের ধ্বনি পত্রিকা
Theme Customized By BreakingNews