ঈদুল আজহার আগে দেশের রেমিট্যান্সে লেগেছে সুবাতাস। বিদায়ী মে মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২৯৭ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিদিন এসেছে ৯ কোটি ৫৮ লাখ ডলার বা ১১৬৯ কোটি টাকা।
এটি দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এবং আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ শতাংশ বেশি।
এ সুবাদে রেকর্ড বৈদেশিক মুদ্রার দায় পরিশোধের পরেও মোট বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলার।
রোববার (১ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বেসরকারি গবেষনা সংস্থা সিপিডির হিসাবে গত দেড় দশকে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ২৮ লাখ কোটি টাকা যার বড় অংশই পাচার হয়েছে আমদানি-রফতানির মাধ্যমে। অর্থ পাচারের আরেকটি খাত ছিল হুন্ডি প্রবণতা। আগে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশই হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হয়ে যেতো। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের আয়ের একটি অংশ পাচারকারীরা সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে কিনে নিতো। কিন্তু ওই অর্থ আর দেশে পাঠানো হতো না। বিপরীতে দেশে থাকা প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজনকে সমপরিমাণ দেশীয় মুদ্রা পরিশোধ করা হতো। যেমন, মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশী কোনো শ্রমিকের কাছ থেকে ওই দেশে থাকা হুন্ডি কারবারীরা মালয়েশিয়া মুদ্রা রিংগিত কিনে নিতো। সমপরিমাণ অর্থ দেশে থাকা প্রবাসীর আত্মীয়-পরিজনকে টাকায় পরিশোধ করা হতো। এতে প্রকৃত প্রবাসী আয় দেশে আসতে না। ৫ আগস্টের পর হুন্ডির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে। এর ফলে দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বেড়ে গেছে। গত দুই মাস ধরে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার করে প্রবাসী আয় দেশে আসছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, দেশে অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই বেড়ে যায় রেমিট্যান্সের (প্রবাসী আয়) গতিপ্রবাহ। রেমিট্যান্স আসায় একের পর এক রেকর্ড হতে থাকে। সদ্য বিদায়ী মে মাসও নতুন রেকর্ড গড়লো রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে। পুরো মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি বা ২.৯৭ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে।
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সে এসেছিল গত মার্চ মাসে ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘বর্তমানে দেশ থেকে অর্থ পাচার বন্ধ হয়েছে। একইভাবে হুন্ডির দৌরাত্ম্যও কমেছে। তাছাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্সের দরও ভালো এবং নিরাপদ রয়েছে। এসব কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, মে মাসের পুরো সময়ে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার বা ২৯৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪১ কোটি ৫০ লাখ ডলার বেশি এসেছে। আর গত মাস এপ্রিলের চেয়ে ২২ কোটি ডলার বেশি এসেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংক গুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। বিশেষায়ীত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে প্রায় ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বেশি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৩৭ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স আর বিদেশী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪১ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিশ্বের বিভিন্ন শ্রমবাজারে যে সংখ্যক বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করছেন তাদের কাছ থেকে সঠিকভাবে আর্জিত আয় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে আনার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে প্রতি মাসে প্রবাসী আয় ৪ বিলিয়ন ডলার ছেড়ে যাবে, এত কঠিন শর্তে দাতা সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নেয়ার প্রয়োজন হবে না।
Leave a Reply