ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ‘শিন বেত’-এর নতুন প্রধান হিসেবে মেজর জেনারেল ডেভিড জিনিকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এই সিদ্ধান্ত ঘিরে ইসরায়েলের রাজনীতি ও প্রশাসনে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। সুপ্রিম কোর্টের আপত্তি ও অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বহারাভ-মিয়ারা’র আইনি হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও নেতানিয়াহু জিনির নাম ঘোষণা করেছেন। তাঁর অভিযোগ, এই নিয়োগে বাধা দেওয়ার পেছনে অ্যাটর্নি জেনারেলের একাধিক স্বার্থের দ্বন্দ্ব রয়েছে।
চলতি এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, বর্তমান শিন বেত প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করে ডেভিড জিনিকে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার পরবর্তী পরিস্থিতির কারণে নেতানিয়াহু রোনেন বারের প্রতি আস্থা হারান বলে দাবি করেন। যদিও সুপ্রিম কোর্ট জানায়, বারের বরখাস্ত সিদ্ধান্তটি আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে গৃহীত হয়েছিল, এবং নেতানিয়াহুর নিজের বিরুদ্ধে স্বার্থের দ্বন্দ্ব রয়েছে বলেও মন্তব্য করা হয়।
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল নেতানিয়াহুকে সতর্ক করে বলেন, চূড়ান্ত আইনি নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত নতুন নিয়োগ স্থগিত রাখতে হবে। কিন্তু নেতানিয়াহু কোনো বাধাকেই তোয়াক্কা না করে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ডেভিড জিনিকে তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে চেনেন এবং আগেই তাঁর নাম বিবেচনায় ছিল। নেতানিয়াহু দাবি করেন, “জিনি গাজা সংকট সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ঘাটন করেছিলেন”, যদিও এই বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দেননি।
তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধকালীন এই পরিস্থিতিতে শিন বেতের নেতৃত্বে দেরি করা যায় না।” এর মধ্যেই চ্যানেল ১২-এর এক প্রতিবেদন জানায়, জিনি সম্প্রতি গাজার কাছে বসবাসরত অবৈধ ইসরায়েলি বসতিস্থাপনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে মুসলিম-বিরোধী উত্তেজক বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, “ইসমাইলের জন্ম থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আমাদের কাছে সবসময় গোয়েন্দা তথ্য থাকে যে খারাপ মুসলমানেরা ভালো ইহুদিদের মারতে চায়।” এই বক্তব্য ঘিরেও নিন্দার ঝড় ওঠে।
এই পটভূমিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মন্তব্য করেন, নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপ আইন লঙ্ঘনের শামিল এবং তাঁর নিজের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত থাকার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। জিনির বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক বিতর্কিত মন্তব্য, রাজনৈতিক বিভাজন এবং আইনগত দ্বন্দ্ব—সব মিলিয়ে শিন বেতের নেতৃত্ব পরিবর্তন ইসরায়েলের ভেতরে বড় রকমের বিভাজনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর মধ্যেই গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫৩,৯০০-রও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
উল্লেখ্য, নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও বিচার আদালত—দুটিতেই মামলা চলছে। এই বাস্তবতায় শিন বেত প্রধান নিয়োগের বিতর্ক ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকেও নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তথ্যসূত্র : আনাদোলু এজেন্সি
Leave a Reply